কাপ নিয়ে মেসির শেষ নাচের অপেক্ষায় / Chtpur
আর মাত্র একটা ম্যাচ! আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থকের হয়তো বিশ্বাসই হচ্ছে না! কেউ কেউ চিমটি কেটেও দেখেছেন নিশ্চয়। আসলেই তা–ই, আর্জেন্টিনা যে এখন বিশ্বকাপের ফাইনালে। হ্যাঁ, লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি, ৩৬ বছর পর শিরোপা জয় এবং প্রয়াত ফুটবল–ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বজয়ের স্মারকটি উৎসর্গ করতে আর্জেন্টিনার পেরোতে হবে আর মাত্র একটি ধাপ। এরপর ম্যারাডোনার সঙ্গে আকাশি-সাদায় মিশে গিয়ে চিরন্তন হয়ে যাবেন রোজারিওর গলিঘুপচি থেকে উঠে আসা ছোট্ট সেই ছেলেটি।
গতকাল শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। বল পায়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু হঠাৎ কোনো এক জাদুকরের নির্দেশে বদলে গেল সবকিছু। কে জানে, অন্য লোকে বসে ম্যারাডোনা কলকাঠি নেড়েছিলেন কি না! বল নিয়ে দৈবাৎ ছুটতে শুরু করলেন হুলিয়ান আলভারেজ। তাঁর কাঁধেই হয়তো ভর করেছিলেন সেই জাদুকর। আলভারেজ ছুটছেন তো ছুটছেনই!
২২ বছর বয়সী এই তরুণ যেন ছুটছেন খোদ মেসি ও ম্যারাডোনার জন্য, আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের অপেক্ষা দূর করার জন্য। মনে হচ্ছিল, তাঁর সামনে চীনের মহাপ্রাচীর দাঁড় করিয়ে দিলে সেটিও তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে যাবেন। একসময় আলভারেজের সেই অতিমানবীয় দৌড় থেমেছে বটে। যখন থেমেছে, তখন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে।
তাঁর আগে অবশ্য তৃতীয় গোলটিতে জাদুকরের ভূমিকায় ফিরলেন মেসি নিজেই। যে গোলটি তিনি আলভারেজের জন্য বানিয়ে দিলেন, সেই অ্যাসিস্ট দেখতে দেখতে যেন কাটিয়ে দেওয়া যায় অনন্তকাল। মেসির স্বপ্নের ট্রফিটাও এখন শুধুই তাঁর স্পর্শ পাওয়ার অপেক্ষায়।
গল্পটা শুরু হয়েছিল আরও অনেক আগে। রোজারিওর রাস্তা ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে সেদিন যুব ফুটবলে প্রথম ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন মেসি। জিতলেই পাবেন স্বপ্নের বাইসাইকেল। অথচ ম্যাচ শুরুর আগে বাথরুমে আটকে গেলেন। অনেক ডাকাডাকি করলেন, কেউ শুনল না তাঁর ডাক।
ম্যাচ তখন শুরু হয় হয় অবস্থা। কী জানি কী হয়! মরিয়া ছেলেটি একপর্যায়ে জানালা ভেঙে বের হয়ে এলেন। তাঁকে সেদিন কেউ আটকে রাখতে পারেনি। ঝড়, তুফান কিংবা টর্নেডোকে কেবা আর আটকাতে পারে।
মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করলেন এবং ম্যাচ জিতলেন। পেলেন কাঙ্ক্ষিত সেই বাইসাইকেলও। বড় হতে হতে সেই স্বপ্নটা বাইসাইকেল থেকে হয়ে গেল বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। যে সোনালি ট্রফির জন্য জীবনের সব অর্জন ফিরিয়ে দিতে রাজি ছিলেন।
২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছুঁতে না পারার বেদনা অনেক অনেক রাত মেসিকে ঘুমাতে দেয়নি। সোনার ট্রফির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকার সেই দৃশ্য এখনো হয়তো মেসির বুকে শেলের মতো বিঁধে। সেই মুহূর্তটি বারবার ফিরে এসেছে দুঃস্বপ্ন হয়ে।
শুধু মেসি কেন, সেদিন শিরোপা ছুঁতে না পারার যন্ত্রণা কতশত আর্জেন্টাইনের রাতের ঘুম যে হারাম করে দিয়েছে, তার কি কোনো হিসাব আছে! যাঁদের অনেকে নিজেদের সর্বস্ব বাজি রেখে কাতারে এসেছেন বিশ্বকাপ শিরোপাটা মেসির হাতে দেখবেন বলে। মেসির সঙ্গে তাঁর সেই স্বপ্নও এখন পূরণ হওয়া থেকে আর মাত্র একটি ধাপ পেরোনোর অপেক্ষায়।
Thanks
Jahidul Islam chtpur
No comments:
Post a Comment